ঢাকা ০২:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুখের সংসারে ছেলে-মেয়েরা, ৩২ বছর ভাঙা ঘরে অসুস্থ মা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৮:০৩:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ মার্চ ২০২০
  • ২০৮ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দুই ছেলে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। স্বামীও স্বাবলম্বী। অথচ গত ৩২ বছর ধরে শিকলবন্দি জীবন কাটছে মানসিক ভারসাম্যহীন নারী হবিবুন নেছার (৫৮)।

৩২ বছরে ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন হবিবুন নেছার দেখাশোনা করছেন বড় ভাই ইসলাম উদ্দিন। বার বার মিনতি করার পরও কোনোদিন মায়ের সাহায্যে এগিয়ে আসেননি ছেলেরা। মানুষকে যেন বিরক্ত না করে সেজন্য মানসিক ভারসাম্যহীন বোনকে বসতঘরের পাশের একটি ময়লা-আবর্জনাযুক্ত ঘরে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছেন ভাই। এ অবস্থায় অনেকটাই কঙ্কালের মতো হয়ে গেছেন হবিবুন নেছা।

বার বার কথা বলতে চাইলেও কোনো কথা বলতে পারেননি তিনি। এমন অমানবিক ঘটনা ঘটেছে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার সদর ইউনিয়নের জফরপুর গ্রামে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার জফরপুর গ্রামের মুহিবুর রহমানের সঙ্গে বিয়ে হয় হবিবুন নেছার। দুই ছেলে ও এক মেয়ে যখন ছোট ছিল তখনই মস্তিষ্কে বিকৃতি দেখা দেয় তার। তখন থেকে তার শুরু হয় লাঞ্ছনার জীবন। স্বামী মুহিবুর রহমান স্ত্রীকে শ্যালকের কাছে পাঠিয়ে অন্য নারীকে বিয়ে করে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে পৃথক সংসার শুরু করেন। স্বামী ও ছেলেরা আজ প্রতিষ্ঠিত ফার্নিচার ব্যবসায়ী।

অথচ ৩২ বছর ভাইয়ের ভাঙা ঘরে শিকলবন্দি মানবেতর জীবনযাপন করলেও ভরণপোষণ, সুচিকিৎসা এমনকি তার খোঁজখবর নেননি স্বামী-সন্তানরা। অমানবিক এ ঘটনার খবর পেয়ে মঙ্গলবার হবিবুন নেছাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন বড়লেখা থানা পুলিশের ওসি ইয়াছিনুল হক।

হবিবুন নেছার ভাই ইসলাম উদ্দিন বলেন, বিয়ের ৫-৬ বছর পরই ছোট বোনের মাথায় সমস্যা দেখা দেয়। অনেক ওষুধ খাওয়ানো হলেও আর সুস্থ হয়নি। স্বামী ও ছেলে-মেয়ে খোঁজখবর নেয় না তার। তার দুই ছেলে ফার্নিচার ব্যবসায়ী। গত ৩২ বছরেও মাকে দেখতে আসেনি দুই ছেলে। যাতে মানুষকে বিরক্ত না করে এজন্য বোনকে বেঁধে রেখেছি।

বড়লেখা থানা পুলিশের ওসি মো. ইয়াছিনুল হক বলেন, ৩২ বছর ধরে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন নারীকে নোংরা স্থানে এভাবে বেঁধে রাখা অত্যন্ত অমানবিক ও মৌলিক অধিকারের চরম লঙ্ঘন। খবর পেয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই নারীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। স্বামী ও সন্তানদের সঙ্গে কথা বলে তার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। স্ত্রী কিংবা মা পাগল হলেও স্বামী-সন্তানদের কাছ থেকে সুচিকিৎসা এবং ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকার রাখেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সুখের সংসারে ছেলে-মেয়েরা, ৩২ বছর ভাঙা ঘরে অসুস্থ মা

আপডেট টাইম : ০৮:০৩:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ মার্চ ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দুই ছেলে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। স্বামীও স্বাবলম্বী। অথচ গত ৩২ বছর ধরে শিকলবন্দি জীবন কাটছে মানসিক ভারসাম্যহীন নারী হবিবুন নেছার (৫৮)।

৩২ বছরে ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন হবিবুন নেছার দেখাশোনা করছেন বড় ভাই ইসলাম উদ্দিন। বার বার মিনতি করার পরও কোনোদিন মায়ের সাহায্যে এগিয়ে আসেননি ছেলেরা। মানুষকে যেন বিরক্ত না করে সেজন্য মানসিক ভারসাম্যহীন বোনকে বসতঘরের পাশের একটি ময়লা-আবর্জনাযুক্ত ঘরে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছেন ভাই। এ অবস্থায় অনেকটাই কঙ্কালের মতো হয়ে গেছেন হবিবুন নেছা।

বার বার কথা বলতে চাইলেও কোনো কথা বলতে পারেননি তিনি। এমন অমানবিক ঘটনা ঘটেছে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার সদর ইউনিয়নের জফরপুর গ্রামে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার জফরপুর গ্রামের মুহিবুর রহমানের সঙ্গে বিয়ে হয় হবিবুন নেছার। দুই ছেলে ও এক মেয়ে যখন ছোট ছিল তখনই মস্তিষ্কে বিকৃতি দেখা দেয় তার। তখন থেকে তার শুরু হয় লাঞ্ছনার জীবন। স্বামী মুহিবুর রহমান স্ত্রীকে শ্যালকের কাছে পাঠিয়ে অন্য নারীকে বিয়ে করে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে পৃথক সংসার শুরু করেন। স্বামী ও ছেলেরা আজ প্রতিষ্ঠিত ফার্নিচার ব্যবসায়ী।

অথচ ৩২ বছর ভাইয়ের ভাঙা ঘরে শিকলবন্দি মানবেতর জীবনযাপন করলেও ভরণপোষণ, সুচিকিৎসা এমনকি তার খোঁজখবর নেননি স্বামী-সন্তানরা। অমানবিক এ ঘটনার খবর পেয়ে মঙ্গলবার হবিবুন নেছাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন বড়লেখা থানা পুলিশের ওসি ইয়াছিনুল হক।

হবিবুন নেছার ভাই ইসলাম উদ্দিন বলেন, বিয়ের ৫-৬ বছর পরই ছোট বোনের মাথায় সমস্যা দেখা দেয়। অনেক ওষুধ খাওয়ানো হলেও আর সুস্থ হয়নি। স্বামী ও ছেলে-মেয়ে খোঁজখবর নেয় না তার। তার দুই ছেলে ফার্নিচার ব্যবসায়ী। গত ৩২ বছরেও মাকে দেখতে আসেনি দুই ছেলে। যাতে মানুষকে বিরক্ত না করে এজন্য বোনকে বেঁধে রেখেছি।

বড়লেখা থানা পুলিশের ওসি মো. ইয়াছিনুল হক বলেন, ৩২ বছর ধরে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন নারীকে নোংরা স্থানে এভাবে বেঁধে রাখা অত্যন্ত অমানবিক ও মৌলিক অধিকারের চরম লঙ্ঘন। খবর পেয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই নারীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। স্বামী ও সন্তানদের সঙ্গে কথা বলে তার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। স্ত্রী কিংবা মা পাগল হলেও স্বামী-সন্তানদের কাছ থেকে সুচিকিৎসা এবং ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকার রাখেন।